বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় নাকি অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়?

টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) না CKRUET নাকি অন্য ভার্সিটির টপ সাবজেক্ট কোনটা নিবো তাদের জন্য –

আজকের দিনে স্বপ্নের ইউরোপ বা জাপান অথবা চায়না, অর্থনীতির দিক থেকে এই দেশ গুলো কিভাবে এগিয়ে গেলো? অবশ্যই তৈরি পোশাকখাত! বাংলাদেশের নেট এক্সপোর্ট আর্নিং এর ৮৪ শতাংশ এনে দেয় তৈরি পোশাক শিল্প বা RMG ইন্ডাস্ট্রি (47.38 Billion $, 2023 and $38.57 billion, 2022) । ইউরোপ, জাপান বা চায়না বাংলাদেশের মতোই এভাবে তৈরি পোশাক দিয়ে বিপুল অর্থ উপার্জন করে কিন্তু তারা তাদের ব্যবসাকে সেমিকন্ডাক্টর, মেশিনারিজ, কেমিক্যালস ইত্যাদি শিল্পে ইনভেস্টমেন্ট করে। যাই হোক বাংলাদেশেও সেই চেষ্টা চলছে।

এই বিস্তর ক্ষেত্র যেখানে টেক্সটাইল এবং RMG সেক্টর এতো গ্রো করছে সেখানে কি আমাদের আসা উচিত এবং মার্কেট স্যাচুরেটেড কি না? দেখো ভার্সিটি থেকে আমরা তখনই নিতে পারবো যখন আমরা চাইবো ! কেউ রিসার্চ করবে, কেউ বা ব্যবসা করবে, কেউ টিউশন করবে, কেউ বা সরকারি চাকরি করবে ! এই সব কিছু কি একটা ভার্সিটি দিতে পারবে?

কি করতে চাও আর কি কি পথ খোলা রাখছো নিজের জন্য এটা তোমাকেই নির্ধারণ করতে হবে, নিজের স্বপ্ন নিজেকেই দেখতে হবে আর এটার জন্য পরিশ্রমও একান্তই তোমার। তাই ভার্সিটি তোমাকে প্লাটফর্ম দিবে বাকি কাজটা তোমার । এটা আরেক যুদ্ধ এবং এর সাথেই তোমার বাকি জীবনের অনেক কিছুই জড়িত।

টেক্সটাইলে বেসিক রিসার্চে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে। পলিয়েস্টার, নাইলন, অ্যাক্রাইলিক সহ অনেক ফাইবার নিয়ে এখনো যাত্রা শুরুই করেনি বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাত যেখানে ধিরুভাই আম্বানি 1966 সালে শুরু করেছিলেন পলিয়েস্টার ফাইবারের ফ্যাক্টরি। সেই ভারতীয়রাই এখন আমাদের  ফ্যাক্টরিগুলোর টপ পজিশনে আছে। আমাদের সামনে আছে অফুরন্ত সুযোগ কিন্তু অবশ্যই সবকিছু সিস্টেমেটিক ও প্ল্যানিংসহ হতে হবে, না হলে এই গ্রোথ একদম ভেঙ্গে পড়বে।

রিসার্চে রয়েছে আরো অনেক সুযোগ, গাড়ির সিট থেকে শুরু করে মহাকাশচারীর স্যুট ! ইউরোপ আমেরিকার অনেক জ্যাকেট এর দাম ১০০০ ইউরো থেকে ২৫০০ ইউরো বা ততোধিক যেগুলো চায়না ম্যানুফ্যাকচার করছে আমরা এখনো শুরু করিনি ! টেক্সটাইল কত বড় তা গাজীপুর বা নারায়ণগঞ্জ অথবা চট্টগ্রামের মানুষদের কাছে জেনে নিতে পারেন। টেক্সটাইল ও গার্মেন্টসের চাহিদা বরাবরই থাকবে কারণ এটা বেসিক চাহিদা।

কিন্তু সমস্যা হলো বাংলাদেশ এই শিল্পের কোনো কাঁচামাল তৈরি করেনা। কটন ফাইবার, মেশিনারিজ, রঙ ও কেমিক্যালস, এক্সেসরিজ প্রায় সব কিছুই চায়নার উপরে নির্ভরশীল আমরা। এখানে অনেক কাজ করা সম্ভব। এমনকি ই. আর. পি. সফটওয়্যার ও বেসিক ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটের জন্য কোম্পানির মালিকগণ ভারতীয়দের উপরে নির্ভরশীল! তারা কোটি কোটি ডলার নিয়ে যাচ্ছে আমাদের থেকে। কিছু শ্রীলংকান টপ ম্যানেজারের বেতন জনাব হাথুরুসিংহের সমপর্যায়ের ! ভাবা যায়?

ভার্সিটি তোমার জন্য, তুমি ভার্সিটির জন্য না!!! তাই নিজে আগে রিসার্চ করো কোনটা তোমার জন্য প্রেফারেবল, কি করতে চাও আর কেনো করতে চাও। টেক্সটাইলে চাকরির সুযোগ আছে অনেক তবে CKRUET এর ক্ষেত্রেও কম না কিন্তু। আমার চাওয়া তোমরা নিজেরা বুঝে শুনে নির্ধারণ করো। প্রচন্ড সারভাইভাল ও পরিশ্রম করে নিজের স্বপ্ন অর্জন করতে হলে বুটেক্স ভালো অপশন, আবরও বলছি অপশন!

বিসিএস দিতে ভার্সিটির সিজি লাগেনা তবুও দেখবা, যে বিসিএস দিচ্ছে সেও সিজির পেছনে ছুটছে আবার যে ইন্ডাস্ট্রি তে জব করবে তারও অনেক সিজির চিন্তা ! নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে একটু ক্লিয়ার থাকবা তবেই না তোমাকে মানুষ আলাদা করে চিনবে!

এখন ডিসিশন নেওয়ার জন্য যা যা করার করো, যেখানেই পড়ো লক্ষ্য সেট করে পরিশ্রম করো। আর সরকারি ভার্সিটিতে পড়ার জন্য যে যে ফ্যাসিলিটিজ দেশের জনগণ তোমাকে দিচ্ছে চেষ্টা করো তার সর্বোচ্চ রিটার্ন দিতে। আল্লাহ্‌ তোমাকে মনোনীত করেছেন, তাই পথ আল্লাহ্‌ ই দেখাবেন। ভরসা রাখো আর কাজ করে যাও।

লেখকঃ

মোঃ আব্দুল্লাহ আল বিশাল

ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং (৪৭ তম ব্যাচ), বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ।

Leave a Comment