বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। প্রতি বছর মোট বৈদেশিক মুদ্রার প্রায় ৮৪ শতাংশই আসে এই শিল্প থেকে, যা কিনা দেশের জিডিপি (GDP) এর প্রায় ২০%। তাছাড়া এই শিল্প প্রায় ৫ মিলিয়ন লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে, যার মধ্যে প্রায় ৮০% ই নারী (যাদের অধিকাংশই অশিক্ষিত কিংবা স্বল্প শিক্ষিত) এবং এতে করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস করে জাতীয় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেই চলেছে এই খাত। তাছাড়া এই ইন্ডাস্ট্রির উপর নির্ভর করেই গড়ে উঠেছে আরো ছোট বড় নানান ধরনের ব্যবসা এবং এসব ব্যবসাও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান করছে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বিশ্ব বাজারে নিজেদের শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করে অনেকটা দাপটের সাথেই ব্যবসা করে আসছে। বর্তমানে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে ২য় স্থানে অবস্থান করছে, ঠিক চীনের পরেই। তবে যদিও বাংলাদেশ বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্প বিশ্ব বাজারে চীনের পরেই অবস্থান করছে, চীনের সাথে রয়ে গেছে বিশাল ব্যবধান।
WTO এর তথ্য অনুসারে, ২০১৮ সালে চীন এবং বাংলাদেশের রফতানি মূল্য যথাক্রমে ১৫৭,৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ৩২,৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ ২৮), বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনাম অপরিবর্তিতভাবে ২০১৮ সালে বিশ্বের শীর্ষ চার বৃহত্তম রফতানিকারক দেশ হিসাবেই রয়ে গেছে। এই ৪ টি দেশই ২০১৮ সালে বিশ্বের মোট বাজার চাহিদার প্রায় ৭২,৩% সরবরাহ করেছে। যদিও ভিয়েতনাম এবং বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে বৃদ্ধির হার মোটেও সন্তোষজনক না। ভিয়েতনামের রফতানি ১৩.৪ শতাংশ এবং বাংলাদেশের রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১১.১ শতাংশ। আবার বিশ্ব বাজারের মোট চাহিদাতে ভিয়েতনামের রফতানি 0.৩% (৫.৯% থেকে ৬.২%) বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের হয়েছে মাত্র ০.১% (৬.৪% থেকে ৬.৫%)। এই থেকে এটাই বুঝা যাচ্ছে যে, সক্ষমতা সীমাবদ্ধতার কারণে কোন দেশই এককভাবে “পরবর্তী চীন” হয়ে উঠেনি বা উঠতে পারছে না। বরং পোশাক রফতানিতে চীনের হারিয়ে যাওয়া বাজার বাংলাদেশ, ভিয়েতনামের মত কয়েকটি দেশ মিলে দখল করছে।
চীনের সাথে প্রায় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবধান কমানোর জন্য এবং বিশ্ব বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালি করার জন্য বাংলাদেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্পকে গতানুগতিক আইটেম থেকে বেরিয়ে এসে ভ্যালু এডেড প্রোডাক্ট এর দিকে জোর দিতে হবে। শুধু মাত্র সস্তা পণ্য দিয়ে এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব। আরো জানতে ক্লিক করুন Textile and RMG Business in Bangladesh.
তাছাড়া শক্তিশালি করতে হবে দেশের ব্যাক-ওয়ার্ড ইন্ডাস্ট্রি গুলোকেও। বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারণে বস্ত্র প্রকৌশলীদের নিশ্চিত করণের মাধ্যমে আরো বেগবান করতে হবে এই ব্যবসাকে। অনেক বেশি যত্নবান ও সচেতন হতে হবে যেকোন ধরণের পলিসি মেকিং এ। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন বিসিএস (টেক্সটাইল)।
শুধুমাত্র তৈরি পোশাক রফতানি করে বিশ্ব বাজারে শক্ত অবস্থা ধরে রাখা সম্ভব না। বাংলাদেশ যদিও তৈরি পোশাক রফতানিতে একটা মজবুত অবস্থানে রয়েছে, তবে অন্যন্য টেক্সটাইল পণ্য রফতানিতে দেশটি এখনো নিজের জাত চেনাতে সক্ষম হয়নি বিশ্ব বাজারে।
অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের বস্ত্র ও পোশাক কারখানাগুলোতে করা এক সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা যায় যে, বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যের আইটেম (value-added products) এর অর্ডার কম হওয়ার কারন হিসেবে প্রধানত নিচের কারন গুলো উল্লেখ করা হয়েছেঃ
- দক্ষ জনবল,
- গবেষণা কার্যক্রম (R&D) না থাকা,
- মার্কেটিং জনিত সমস্যা, ইত্যাদি।
তারপরও বর্তমান বাজারে টিকে থাকার প্রয়োজনিয়তা অনুধাবন করেই প্রায় ৪৮ শতাংশ নমুনা কারখানা (Survey factories) বলছে আমাদের এখন ব্যাসিক আইটেমের পাশাপাশি উচ্চ মূল্যের আইটেম (value-added products) নিয়ে কাজ করা জরুরি, তবে মাত্র ২০% নমুনা কারখানা বলছে তারা এখনো ঐসব আইটেম করার জন্য প্রস্তুত না যদিও প্রায় ৩২ শতাংশ কারাখানা হ্যাঁ-না এর মাঝামাঝি অবস্থান করছে।
আসলে মূল কথা হল, বাজারে টিকে থাকতে হলে বাজারের গতিবিধি বুঝেই টিকে থাকতে হবে, থাকতে হবে বাজার নিয়ে খুব সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম চুলছেরা বিশ্লেষণ। বাজার প্রবণতা (market trend) বুঝেই প্রত্যেক কারখানাকে তাদের প্রোডাক্ট পোর্টফোলিও সেট করতে হবে। শুধুমাত্র বর্তমানে পাওয়া অর্ডার নিয়ে ব্যস্ত থাকলেই চলবে না। প্রোডাক্ট পোর্টফোলিতে ডিভার্সিফাইড আইটেম যোগ করতে হবে। তবে খুবই আশাব্যঞ্জক যে, বাংলাদেশের বড় বড় অনেক কোম্পানি ইতিমধ্যেই এক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে। ফলশ্রুতিতে চড়া দামে বিক্রি করে তুলনামূলক বেশি লাভও করতে পারছে। এভাবেই এগিয়ে যাক বাংলাদেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্প।
তথ্যসূত্র: WTO Reports World Textile and Apparel Trade/২০১৮
Texpedi.com