ইঞ্জি: ফয়সাল রিশাদ
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (৩৬তম ব্যাচ)
বাংলাদেশের প্রায় আশিভাগ অর্থনীতি কোনো না কোনো ভাবে বস্ত্র শিল্পের উপর নির্ভরশীল। এই বস্ত্র শিল্পে একজন শ্রমিকের নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো থাকলেও একজন বস্ত্র প্রকৌশলী কতো বেতনে ফ্যাক্টরিতে চাকরি শুরু করবেন তার কাঠামো কোনো এক অজানা কারণে আজ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়নি। বস্ত্র প্রকৌশলীদের বেতন কাঠামো বেসরকারি খাতে কিরূপ হবে তা তুলনা করা যেতো যদি সরকারি খাতে বস্ত্র প্রকৌশলীদের জন্য কোনো পদ থাকতো। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার কারণে বেসরকারি বেতন কাঠামো অবশ্যই সরকারি বেতন কাঠামো থেকে বেশী হতো, কিন্তু যেহেতু সরকারি কোনো পদ বস্ত্র প্রকৌশলীদের জন্য নেই সেহেতু এ সুযোগে গার্মেন্টস মালিকরা বস্ত্র প্রকৌশলীদের জন্য কোনো নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো তৈরি করেন নি। ফলে স্বল্প বেতনে একজন বস্ত্র প্রকৌশলীকে চাকরি শুরু করে বছরের পর বছর সে চাকরি টিকিয়ে রাখতে হয় এবং অন্যান্যদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হয়। বর্তমানে বেসরকারি খাতে চাকরির শুরুতে যে বেতন বস্ত্র প্রকৌশলীদের প্রদান করা হয় তা সরকারি দশম গ্রডের বেতন কাঠামোর চেয়েও কম যা অন্যান্য প্রকৌশলীদের বেতনের সাথে অতুলনীয়।
দেশে একটি সরকারি টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, কয়েকটি সরকারি টেক্সটাইল কলেজ এবং অসংখ্য বেসরকারি ইনস্টিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেগুলো থেকে প্রতিবছর হাজার হাজার বস্ত্র প্রকৌশলী বের হয় অথচ তাদেরকে চাকরি দেয়ার জন্য সরকার কোনো পদ তৈরি করেনি। এমনকি দেশে বস্ত্র মন্ত্রণালয় ও বস্ত্র অধিদপ্তর পর্যন্ত রয়েছে যেখানে বস্ত্র প্রকৌশলীদের কাজ অন্যান্য সাধারণ বিষয়ে পাশ করা কর্মকর্তারা হয়তোবা করছে যা একজন বস্ত্র প্রকৌশলী করলে নিঃসন্দেহে আরও ফলপ্রসূভাবে করতে পারতো। শুধু তাই নয়, দেশের কাস্টমস থেকে শুরু করে অডিট, ট্যাক্স এমনকি প্রশাসনেও একজন বস্ত্র প্রকৌশলীর অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে, যেমন- একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্যাটকে প্রায়ই ভেজাল খাবার কিংবা ভেজাল ঔষধ রাখার জন্য জরিমানা করতে দেখা যায়, অথচ কাপড়ের দোকানেও কাপড়ে Carbon free print কিংবা Azo free dye ব্যাবহার না করার কারণে জরিমানা করা উচিৎ কারণ এগুলে শরীরে ক্যান্সারের জন্য দায়ী। এরকম অসংখ্য বিষয় সম্পর্কে জনগনকে সচেতন করা একজন বস্ত্র প্রকৌশলীর পক্ষেই সম্ভব। খাদ্যের পরে বস্ত্র মানুষের দ্বিতীয় মৌলিক চাহিদা, অথচ খাদ্য সম্পর্কে মানুষকে যতোটা সচেতন করা হয় কাপড় সম্পর্কে ততোটা করা হয় না। এ কারণে অসাধু বিক্রেতারা বাজারে গুণগত মান বজায় না রেখেই উচ্চ মূল্যে কাপড় বিক্রি করে জনগণকে সহজেই ধোঁকা দিতে পারছে।
যুক্তিসঙ্গত পোস্ট