বৈশ্বিক করোনা প্রাদুর্ভাব এবং পোশাক শিল্প

কোভিড
-১৯
 (করোনা ভাইরাস) তার
থাবা বসিয়েছে পৃথিবীর সর্ব্বোত্র
, কেড়ে নিয়েছে এবং নিচ্ছে হাজারো
জীবন।
 মৃত্যুর
মিছিল যেন থামতেই চাচ্ছে না।
 থমকে গেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
জীবন বাঁচাতে মানুষ এখন গৃহ বন্দী। ঘরের বা
হিরেই যেন অপেক্ষা
করছে মৃত্যু। বাধ্য হয়ে সাধারণছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। দেশের অর্থনীতি হুমকীতে
 পড়ার সমূহ সম্ভাবনা তৈরি
হয়েছে ইতিমধ্যেই
ঠিক এই পরিস্থিতিতে কি অবস্থা
দেশের রপ্তানী খাতের প্রধান উৎস পোশাক শিল্পের
? এই খাতের কারিগরদের –পোশাক শ্রমিক, বস্ত্র
প্রকোশলী ও আরও যারা এই খাতের সাথে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত-
 কি অবস্থা তাদের? কতটা সুরক্ষিত তারা? এই
অবস্থায় এই খাতেরই বা নিরাপত্তা কতোটা
?
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র শিল্প থেকেই উপার্জিত
হচ্ছে মোট বৈদেশিক মুদ্রার প্রায় ৮৪%
, যা আবার জিডিপির প্রায়
২০%। তাই দেশের অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখতে অত্যন্ত যত্নশীল হতে হবে এই শিল্পের
প্রতি। কিন্তু বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বর্তমান পরিস্থিতি ও আমাদের সীমাবদ্ধতা
বিবেচনায় আসলেই কতটুকু সুরক্ষিত এই খাত কিংবা কতটুকু সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব
হচ্ছে
? ইতিমধ্যে বস্ত্র প্রকৌশলীদের সংগঠন আইটিইটি (ITET) দেশের বস্ত্র প্রকৌশলীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহন
করলেও পোশাক শ্রমিকদের ভোগান্তি দিন দিন বেড়েই চলেছে।
জীবিকা নির্বাহের তাগিদে ঘরে বসে থাকা তাদের জন্য
অসম্ভব একটি ব্যাপার।
 জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাই তাদের কাজ করে যেতে হচ্ছে। এদিকে নীতিনির্ধারকদের সমন্বয়হীনতার জন্য ভোগান্তি
বেড়ে হয়েছে কয়েকগুণ।
 লকডাউনে যখন গণপরিবহন বন্ধ তখন
ঘোষনা দেয়া হয়েছে তাদের ফিরতে হবে কর্মস্থলে
, কিন্ত বন্ধ থাকবে গণপরিবহন!!
জীবিকার তাগিদে
, চাকরী বাঁচাতে তারা পায়ে হেটে ফিরেছে কর্মস্থলে! ফেরার
পর তাদের জানানো হয়েছে কারখানা আবারো বন্ধের ঘোষনা! তবে কি এই পরিস্থিতিতে আমরা এই
শ্রমিকদের খরচের খাতায় রেখেছি
? যদি উত্তর না হয় তাহলে, তাদের
জন্য কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে
? তাদের কর্মস্থলে তারা
কি নিরাপ
, তারা
কি নিরাপদ কাজের পরিবেশ পাচ্ছে আদৌ
?
পোশাক
শ্রমিকদের করোনা ভাইরাস শনাক্তে গাজীপুর চন্দ্রায় “পিসি-আর” (
PCR-polymerase
chain reaction
 ) ল্যাব স্থাপন করেছে বিজিএমইএ
যেখানে প্রতিদিন ৪০০ শ্রমিকদের করোনা পরীক্ষা করা যাবে বলে তারা জানিয়েছেন। কিন্ত
তা আসলে কতোটা কার্যকর হয়েছে
 বা পোশাক শ্রমিকদের জন্য সেটা পর্যাপ্ত কিনা? পরীক্ষায়
করোনা আক্রান্ত শ্রমিকদের চিকিৎসা
 ব্যবস্থা হচ্ছে তো কিংবা এ ধরনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে? বিজিএমইএ
এর প্রেসিডেন্ট রুবানা হক জানিয়েছেন কর্মী ছাটাইয়ের কথা
, করোনা সংকটের কারণে পোশাক খাতে ৫
বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ধাক্কা লেগেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। যাদের কাঁধে আমাদের
অর্থনীতি নির্ভরশীল এই মূহুর্তে
 বরং তাদের স্বাস্থ্যগত ও জীবিকার  নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি।
সরকার পোশাক শ্রমিকদের তথা এই
খাতকে টিকিয়ে রাখতে ইতিমধ্যেই ৫০০০ কোটি টাঁকা প্রণোদনা ঘোষণা করেছে।
 এই খাতে বরাদ্ধ  সরকারের
প্রণোদনার সঠিক ব্যবহার হচ্ছে কিনা সেদি
কেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। অন্যদিকে ফ্যাক্টরিগুলোতেও
আগের মত কাজ নেই
, অনেক অর্ডারই বাতিল হয়ে গিয়েছে
বলে মালিক পক্ষের অভিযোগও রয়েছে। ছোট কিংবা মাঝারি আকারের ফ্যাক্টরি গুলো
শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা দিতেই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের
অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাটাই যেন বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বড় বড় কোম্পানিগুলো
এখন পর্যন্ত তাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে সব কিছু ব্যালেন্স করে বাজার ধরে
রাখার জন্য।
তবে এই মুহূর্তে বৈশ্বিক মহামারীর প্রকোপে বেকারত্বের হার ভয়ানক আকার ধারণ
করছে। করোনা কালীন এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারলেও দেশীয় অর্থনীতিতে আসা এই
বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ এর মতো মধ্যম আয়ের দেশকে বেশ বেগ পেতে হবে। কর্মী
ছাটাই এই মূহুর্তে সঠিক সিদ্ধান্ত কিনা আবারো ভাববার বিষয়। বরং কর্মীদের স্বাস্থ্য
নিরাপত্তার
  দেয়ার সাথে সাথে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় এর দেয়া স্বাস্থ্যবিধি
মেনে চলার জন্য কর্মীদের সচেতন করে
 তোলার ব্যবস্থা করাই যুক্তিযুক্ত নয় কি? মনে রাখতে হবে যাদের এতদিনের অক্লান্ত শ্রমের বিনিময়ে
আজকের বাংলাদেশ তৈরি পোশাক বাজারে এক পরাশক্তির নাম
, এমন
দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়ানোই হবে সঠিক সিদ্ধান্ত।
Courtesy:
শিলা ফারজানা
B.Sc. & M.Sc.
in Clothing & Textile
Texpedi.com

Leave a Comment