পিএইচডি ডিগ্রী কি? | What is a PhD degree?

পিএইচডি ডিগ্রী কোন অর্নামেন্ট না। এটা কোন গোল্ড বা প্লাটিনাম
নেকলেস বা এয়ার রিং বা নোজ পিন না। একজন পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করলে তাঁর আসল
পড়াশুনা ও গবেষণা মূলত শুরু হয়ে যায়। পিএইচডি একটা একাডেমিক ট্রেনিং টু মুভ
ফরোয়ার্ড টু কন্ট্রিবিউট টু দ্যা একাডেমিক ওয়ার্ল্ড। 

কিছু মানুষ
আছেন যারা একটা পিএইচডি অর্জন করে এমন ভারভারিক্কি হয়ে যান যেন তাঁর সব কাজ শেষ
হয়ে গেছে কিংবা তিনি একাডেমিক পিকে পৌছে গেছেন। এটা যেমন সত্য
, ঠিক এটাও সত্য যে,
এদের বাইরে বহু মানুষ আছেন যারা পিএইচডি করার পর উল্লেখযোগ্য
পরিমাণে একাডেমিক্যালি কন্ট্রিবিউট করতেছেন (অন্তত যারা একাডেমিক ইন্সটিটিউটে কাজ
করছেন)।

আবার, পিএইচডি না করে
কিছু মানুষ আছেন যারা বরং কিছু পিএইচডি করা মানুষের চেয়ে ভালভাবে অবদান রাখছেন
,
একাডেমিক কাজ করতেছেন। ঠিক তেমনি, পিএইচডি
না করা অনেকে আবার তেমন কোন কাজই করতেছেন না। কাজেই
, কথা
হল
, পিএইচডি একটা একাডেমিক ডিগ্রী যা অর্জন করতে কতগুলি
একাডেমিক রিকোয়ারমেন্ট ফুলফিল করতে হয়। এটাকে খাটো করে দেখার কিছু নেই। দু
চার পাঁচ দশজন যারা এখানে সেখানে পিএইচডি করে এক পিএইচডি সার্টিফিকেট
ছাড়া কিছু প্রডিউস করেছেন না
, তাঁদেরকে দেখে অন্য হাজারো
যারা পিএইচডি করার পর একাডেমিক এরেনাতে অবদান রাখছেন
, পিএইচডিকে
তাচ্ছিল্য করে তাঁদেরকে বক্রভাবে দেখা বুদ্ধিমানের কাজ না
, ন্যায়ানুগও না।


আবার, পিএইচডি না করে
অনেকে যেমন উল্লেখ করার মত কোন কাজ করছেন না
, তাঁদেরকে
দেখে পিএইচডি না করা এমন কিছু লোক আছে যারা ভাল অবদান রাখছেন (গবেষণা করছেন
,
আর্টিকেল প্রডিউস করছেন), পিএইচডি না
করার কারণে তাঁদেরকে বক্রভাবে দেখাও বুদ্ধিমানের কাজ না। আসল কথা হল
, আপনি পিএইচডি করে বা না করে কী কাজ করছেন, আপনি
একাডেমিক্যালি কী কন্ট্রিবিউট করতেছেন–এটিই গুরুত্বপূর্ণ। পিএইচডি করে যদি ফারদার
কোন কাজ না করেন
, তাতে আপনার এই পিএইচডিতে দেশ, জাতি, দুনিয়াবাসীর লাভটা কী? আবার, পিএইচডি না করেও যদি আপনি একাডেমিক্যালি
কন্ট্রিবিউট করেন
, তাতে দেশ, জাতি
কিংবা দুনিয়াবাসীর লাভ আছে। একাডেমিক প্রোডাকশন ইজ ইম্পরট্যান্ট
, নট মেয়ারলি এ ডিগ্রী।

আমার পিএইচডির ডিফেন্সের দিন
যখন আমাকে সিদ্ধান্ত জানানো হল
, কমিটির চেয়ার প্রফেসর
আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলেন (আমার সুপারভাইজারসহ) যে
, “তোমার
আসল কাজ এখন থেকে শুরু হবে। পিএইচডি হল এই কাজ করার জাস্ট একটা ভাল ট্রেনিং
,
একটা ভাল প্রিপারেশন” (ইওর রিয়েল জব উইল বিগিন নাউ। পিএইচডি
ইজ জাস্ট এ গুড ট্রেনিং
, এ গুড প্রিপারেশন)। আমার একজন
সহকর্মী জানিয়েছেন যে
, তাঁর পিএইচডি ডিগ্রী এওয়ার্ডের সময়
তাঁর প্রফেসর তাঁকে বলেছেন
, “পিএইচডি ইজ এ
সার্টিফিকেট টু এন্টার দ্যা ওসেন অফ রিসার্চ। ইউ হ্যাভ জাস্ট স্টার্টেড ইউওর
জার্নি” (পিএইচডি হল গবেষণা সমুদ্রে প্রবেশ করার একটা টিকেট মাত্র। তুমি কেবল
তোমার ভ্রমণটা শুরু করেছ)। এই রকম কথা যারা পিএইচডি করেছেন এমন অনেকেই শুনে
থাকবেন।
আমি আর একটা
পয়েন্ট এখানে উল্লেখ করতে চাই। তা হল
, পিএইচডি তো নতুন কিছু এক্সপ্লোর করা, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা। সেটিই যদি হয়, সবার
পিএইচডি থিসিস বই আকারে পাবলিশ হয় না কেন
? অনেকে বলতে
পারেন
, আর্টিকেল পাবলিশ করেছি। ভাল কথা। আর্টিকেল পাবলিশ
করার পরও একটা পিএইচডি থিসিস থেকে কমপক্ষে একটা বই পাবলিশ হওয়া একেবারেই ন্যায্য
কথা। আমার সহকর্মীদের কেউ কেউ বলেছেন যে
, সাইন্সের
সাব্জেক্টগুলির ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য না। সাইন্সের কোন কোন পিএইচডি থিসিস কখনো
কখনো বড় জোড় একটা বুক চ্যাপ্টার বা জার্নাল আর্টিকেল হতে পারে। ঠিক আছে
, মানলাম। কিন্তু আর্টস কিংবা সোশ্যাল সাইন্সের বেলায় এ কথা খাটে না।
আর্টস বা সোশ্যাল
সাইন্সের একটা পিএইচডি থিসিস সাধারণত ৫০/৬০ হাজার শব্দ থেকে এক লাখ বা দেড় লাখ
শব্দ পর্যন্ত হয়ে থাকে। এমনকি এর বেশীও হতে পারে। তো এত হাজার হাজার পিএইচডি
, তো তাঁদের বইগুলি
কোথায়
? এই থিসিসগুলি কেন পাবলিশ হয় না? আমি কি ভুল বললাম? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা
যারা পিএইচডি করেছেন
, কিংবা শিক্ষকদের বাইরে অন্যান্য
পেশার যারা পিএইচডি করেছেন
, তাঁরা সকলেই কি বই পাবলিশ
করেছেন বা করেন
? যদি না করেন, তাইলে
আপনার পিএইচডি তো স্রেফ একটা গোল্ডেন নেকলেস কিংবা নেম পিন। নামের আগে বা পরে এটা
বসিয়ে নিজের নামের সুরতটাকে বিউটিফাই করার মত। এই জাতীয় একাডেমিক নেকলেস আপনার
নামের সুরত সুন্দর করলেও জাতির তাতে লাভটা কি
? সমাজের
তাতে উপকারটা কি
? পিএইচডি কি যিনি পিএইচডি করেন, কেবল তাঁর লাভের জন্য (ড. অমুক বা মিঃ প্রমোশন), নাকি মানুষের জীবনে, সমাজজীবনে এর
ইমপ্লিকেশন্স থাকার কথা
? আবার, বিশ্ববিদ্যালয়ে
এমন অনেকে আছেন যারা পিএইচডিও করছেন না
, কোন গবেষণাও
করছেন না। তাঁরা আবার পিএইচডি ডিগ্রীর সমালোচনা করেন
, যা
বড্ড বেমানান লাগে।
শেষত বলি, পিএইচডি করাকে
যেমন অনুৎসাহিত করার কথা কল্পনা করা যায় না
, ঠিক তেমনি
একটা পিএইচডি হয়ে গেলেই কেল্লা ফতে না। তবে
, আধুনিক
একাডেমিক ওয়ার্ল্ডে পিএইচডিকে ধরা হয় একটা একাডেমিক অর্জন। দেশ বা জাতিভেদে
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক স্ট্যান্ডার্ডের হেরফের আছে। বিশ্বের নামকরা কোন
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে এন্ট্রি পয়েন্টেই পিএইচডি লাগে
, যদিও বাংলাদেশে তা লাগে না।
পিএইচডি অর্জন
করা কেবল নামের আগে ড. লেখার বিষয় না। পিএইচডি কোন অর্নামেন্ট না যে তা নামের সাথে
লাগিয়ে ব্যক্তির সৌন্দর্য বর্ধন করতে হবে। পিএইচডি থিসিস একটা পাবলিক ডকুমেন্ট।
অন্তত পক্ষে আর্টস এবং সোশ্যাল সাইন্সে যারা পিএইচডি করেন
, তাঁদের থিসিস বই
আকারে পাবলিশ করাটা একটা পাবলিক ডিমান্ড। বাংলাদেশে কতজন তা করছেন বা করেন
?

Courtesy:
Dr. Md. Nazrul Islam
Professor of Political Studies,
Shahjalal University of Science and
Technology, Sylhet, Bangladesh

Texpedi.com

Leave a Comment