ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের টেক্সটাইল-গার্মেন্টস শিল্প

মার্চের শুরুর দিকে করোনা ভাইরাসের কারণে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডে যখন লকডাউন শুরু
হয় তখন বায়ারগন একের পর এক অর্ডার স্থগিতা/কেন্সেল করা শুরু করে।
 মার্চের শেষের দিকে এসে
অর্ডার স্থগিত/কেন্সেলের পরিমান প্রায় ৫০% এ নেমে আসে। বিরাট ধাক্কা লাগে পুরো
সেক্টরজুড়ে। রপ্তানি আদেশ এভাবে কমতে থাকলে টেক্সটাইল-
গার্মেন্টস গুলো সচল রাখা
কঠিন হয়ে যাবে। চায়না থেকে যেসব কাপড় শিপমেন্ট হওয়ার কথা সেগুলোর শিপমেন্টও স্থগিত
করার নোটিফিকেশন পাঠানো হল। এপ্রিল জুড়ে একটা হযবরল অবস্থা চলছিল। আল্লাহর অশেষ
মেহেরবানিতে মে মাসের শুরু/মাঝামাঝির দিকে এসে অস্ট্রেলিয়া
, নিউজিল্যান্ড, ইউরোপ, আমেরিকার কিছু কিছু দেশে করোনা
পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে। সেখানকার লকডাউন পরিস্থিতি উঠে গিয়ে স্বাভাবিক হতে
শুরু করে।

বাংলাদেশের টেক্সটাইল-গার্মেন্টস শিল্প


মে
মাঝামাঝি থেকে স্থগিত/কেন্সেল হওয়া অর্ডারগুলো পুনরায় একটিভ হওয়ার নোটিফিকেশন আসতে
শুরু করে। আশার আলো উঁকি দেয় । কারণ 
টেক্সটাইল-গার্মেন্টস সেক্টর ১০-২০-৫০
মিলিয়নের রপ্তানি বাজার নয়। বরং বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি জড়িত
,প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে লাখ লাখ মানুষ, পরিবার,
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে 
টেক্সটাইল-গার্মেন্টস সেক্টর জড়িত। ব্যাংকিং সেক্টর এর বিরাট অংশ আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ার এলসি, প্রকল্পে
বিনিয়োগের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অংশ আয় করে । ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ এর মধ্যে লেভেল
,
ট্যাগ, বাটন, জিপার,
সুইং থ্রেড, পলি, কার্টুন ইত্যাদি প্রস্তুতকারক ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি 
টেক্সটাইল-গার্মেন্টস সেক্টর এর উপর নির্ভরশীল। কারখানা থেকে পোর্টে পন্য
পরিবহনকারী কার্গো
, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সিগুলোর আয়ের বিরাট
অংশ জড়িত 
টেক্সটাইল-গার্মেন্টস সেক্টরের সাথে।

পুরোনো অর্ডারগুলোর একটিভ হওয়া ও নতুন অর্ডারের অনুসন্ধান আশার আলো
দেখাচ্ছে। বায়ারদের স্টোরগুলো ফাকা। সেলস ডিমান্ড বেড়ে চলছে। এমনকি বায়ার নিজদের
খরচে মাল এয়ারে(আকাশপথে) শিপমেন্ট নেয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে। কারণ দ্রুততম সময়ের
মধ্যে ওদের আউটলেটে মাল পৌঁছাতে হবে।
ইনশাআল্লাহ আশার আলো দেখছি।
তারপরও আল্লাহর মেহেরবানিতে নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে সব স্বাভাবিক হয়ে আসবে আশা
করি। এর আগেও টেক্সটাইল-গার্মেন্টস সেক্টর স্বাভাবিক হতে পারে৷ তবে গত দুই তিন
মাসে যে ধাক্কা লেগেছে
, সে
ধাক্কা সামলে আগামী ৩-৪ মাস টিকে থাকতে পারাটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। ছোটো ও মাঝারি
শিল্পগুলোকে প্রনোদনা দিয়ে টিকিয়ে রাখতে পারলে ওগুলোও ঘুরে দাড়াবে ইনশাআল্লাহ। এই
দুঃসময়ে 
টেক্সটাইল-গার্মেন্টস সেক্টরের কিছু মালিক শত বাধা, বিপত্তি, অসুবিধা সত্ত্বেও কর্মীদেরকে আগলে
রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের মালিকরা সরাসরি ইনভলভ হন না।
উর্ধতন কর্মকর্তাদের দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালান। এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের
প্রকৃত চিত্র মালিকগনের কাছে পৌঁছে কম । সেক্ষেত্রে শ্রমিক-কর্মচারীদের বঞ্চিত
হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

করোনা ভাইরাস একসময় থাকবে না কিন্তু এমন দুঃসময়ে শ্রমিকদের প্রতি, অধস্থনদের সাথে মানবিক হওয়ার
বিকল্প নেই। মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার এমন সুযোগ হয়তো আর আসবে না।
অতএব ছাটাই না করে, কাউকে চাকুরিচুত না করে আগামী কয়েক মাসের জন্য কম
অর্ডার
, কম শিপমেন্ট এর উপর ভিত্তি করে কাউকে না ছাটাই
করে কিভাবে সবাইকে নিয়ে এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতি থেকে উত্তরন করা যায় সেই ছক তৈরি
করুন। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে আমাদের প্রতিষ্ঠানের সন্মানিত
মালিক পক্ষ কেউ যেন ছাটাই না হয় প্রথম থেকেই চেষ্টা চালিয়ে আসছেন৷ প্রতিষ্ঠানের
কর্মীদের তৃপ্তি ও দোয়াও প্রতিষ্ঠানের উন্নতির পেছনে ভূমিকা রাখে বলে মনে করি। সব
প্রতিষ্ঠানের মালিকগন এই দুর্দিনে তাদের কর্মীদের দূরে ঠেলে না দিয়ে আগলে রাখার
চেষ্টা করবেন এমনটাই যেন হয়।

সবার জন্য শুভকামনা।

Courtesy:

ইঞ্জিনিয়ার মোঃ ইকবাল হোসাইন

Texpedi.com

Leave a Comment